রুশোর মতে মানব জীবনে বিকাশের স্তর (Stages of Human Development)
রুশো তার এমিল গ্রন্থে বিভিন্ন বয়সের শিশুর
জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রবর্তনের কথা বলেন। এমিল গ্রন্থের মধ্যে দু'জন এর
জীবনী বর্ণিত আছে যথা এমিল এবং সোফি। এমিলের শিক্ষা কালকে বয়স অনুযায়ী কয়েকটি
পর্যায়ে তিনি ভাগ করেছেন এবং উপন্যাসের কাহিনীর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অধ্যায়ে একটি
পর্যায়ে শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য কে পরিস্ফুট করে তুলেছেন।
তিনি মানব জীবনের বিকাশকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন।
প্রথম স্তর(1-5 বছর)
এই
স্তরে শিশুর ইন্দ্র গঠন এবং দৈহিক বিকাশ এর উপর জোর দেয়া হবে।দৈহিক বিকাশের জন্য
তিনি খেলাধুলার কথা বলেন।আনন্দ ও খেলার মধ্যে সে বড় হবে। তার খেলার সামগ্রী হবে
গাছের ফুল, ফল, ডালপালা, কাঠের বল, আর এই স্তরে পুথির কোন ভূমিকা থাকবে না। দুর্বল
সাস্থের অধিকারী শিশুর মধ্যে আদেশ মানার শক্তি থাকবে না। তাকে গ্রামের পরিবেশে
নিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক ঘটনা গুলি পর্যবেক্ষণ করাতে হবে এবং তাকে মুক্ত ভাবে ছেড়ে
দিতে হবে। তাহলে সে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।এই স্তরে শিশু পরিমিত স্নেহ-ভালবাসা
পুঁজি করে মুক্ত বিচরণ ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে শিশু বড় হবে। প্রতিকূল পরিবেশের
সঙ্গে সংগ্রাম করে প্রকৃতির পাঠশালায় সে শিক্ষালাভ করবে Heloise গ্রন্থে মা জুলি বলেছেন my work is not to educate my children, but to prepare them for future.
দ্বিতীয় স্তর বা বাল্যস্তর(5-12বছর)
এই স্তরের শিশুর
যুক্তি ক্ষমতা পরিপক্ক না হওয়ায় বুদ্ধিবৃত্তির শিক্ষা দেওয়া অর্থহীন।শিশুকে শিশু থাকতে দিতে হবে। মনের জমি সাময়িকভাবে অনাবাদি থাকলেও ভবিষ্যতে
আবাদে সোনা ফলবে। রুশো বলেছেন Exercise tha body, tha organs,
tha sense and powers, but keeps the soil laying follow as long as you can.
শিক্ষা
বিস্তারে প্রকৃতির শাসন পুরোপুরি কাজ করবে। বাহ্যিক শাসন নয় কর্মফলই হবে প্রকৃত
শাস্তি। বাল্যের শিক্ষা
মূলত নেতিবাচক হলেও ইতিবাচক শিক্ষার প্রাথমিক সূচনা হবে। পরিবেশ নিরীক্ষণের মধ্য
দিয়ে রং, আকার, দৈর্ঘ্য, দূরত্ব, ওজন, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য এর জ্ঞান আসবে।মাটি, জল,
বালি, গাছপালা, দিয়ে ঘর বাড়ি, দুর্গ, প্রভৃতি তৈরি করা এবং ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে
খেলার ছলে শিশুর নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তি বাড়বে।
তৃতীয় স্তর(12-15)
এই স্তর জ্ঞান অর্জনের স্তর। এতদিন পর্যন্ত ইন্দ্রিয় ও দেহের শিক্ষার ফলে
পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানসিক ক্ষমতা বেড়েছে সুতরাং এই স্তরই জ্ঞানার্জন ও প্রয়োগের সময়। শিক্ষনীয় বিষয় নির্বাচনে জ্ঞানের
প্রয়োগমূল্য বিচার হওয়া উচিত। জ্যোতিষবিজ্ঞান,
ভূগোল পড়ার কথা ও রুশো বলেছেন। এই স্তরে বইয়ের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন তবে
বইয়ের সংখ্যা হবে কম। তাছাড়া
এই স্তরে তিনি হস্তশিল্প শিক্ষার কথা বলেছিলেন যা থেকে শ্রমের প্রতি মর্যাদা বোধ
জন্মায় ও জীবিকা অর্জনে স্বাবলম্বী করে তোলে।
চতুর্থ স্তর(15-20 বছর)
চতুর্থ স্তর এই স্তর সমগ্র জীবনের পক্ষে
গুরুত্বপূর্ন। এতদিন পর্যন্ত শিশুর শিক্ষা হয়েছে আত্মবিকাশ ও আত্মোন্নতির জন্য।
এখন সমাজ প্রীতির সময়, এই স্তরে অন্তর্গঠন এর জন্য নীতি শিক্ষা ও ধর্ম শিক্ষার
কথা বলেছেন। জীবনে প্রকৃত প্রয়োজন এখান থেকেই শুরু। সামাজিক সম্পর্কের শিক্ষাই
প্রকৃত শিক্ষা। মানবিক দর্শন ও ইতিহাস পড়ে সামাজিক মনোভাব সৃষ্টি হবে। মহৎ
ব্যক্তিদের জীবনী পড়ে মানুষের উপর শ্রদ্ধা জন্মাবে। দর্শন পড়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও
ব্যক্তি মানুষের সম্পর্ক জানা যাবে। তখনই আসবে ধর্ম চেতনা ও প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা।তাছাড়া
কিশোরের যৌন প্রবণতা উদগমন এর জন্য চাই যৌন শিক্ষা।
এমিল গ্রন্থের
পঞ্চম অংশে এমিলের ভাবি পত্নী সফীর শিক্ষা বর্ণনা প্রসঙ্গে স্ত্রী শিক্ষা সম্পর্কে
বলেছেন। দুঃখের বিষয়
শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি তদানীন্তন যুগ চেতনার ক্ষুদ্র তাকে ত্যাগ করতে পারেননি। স্ত্রী জাতির বুদ্ধিবৃত্তিতে তিনি আস্থা স্থাপন করতে পারেননি। তিনি বলেছেন A woman of culture is tha plague of har
husband har children har family har servants everybody.
রুশোর শিক্ষা
চিন্তার মধ্যে পরস্পর বিরোধী ধারণার অবতারণা করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও তার চিন্তার
মধ্যে আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বীজ রোপণ করা হয়েছিল। কারণ তিনি প্রথম শিক্ষা
ক্ষেত্রে শিশুর গুরুত্বকে সর্বাগ্রে স্থান দেন। তিনি আরো বলেছেন শিশুর প্রকৃতি
অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনা রচিত হবে।
রুশোর মতে মানব জীবনে বিকাশের স্তর (Stages of Human Development)
Reviewed by Unknown
on
October 08, 2018
Rating:

Thanku sir this post help me
ReplyDelete