ভারতীয় শিক্ষাবিদ অরবিন্দ ঘোষ শিক্ষা দর্শন
অরবিন্দ ঘোষ
শ্রী অরবিন্দ 1872 খিস্টাব্দে 15 অগস্ট কলকাতার নিকট
কোন্নগরে জন্মগ্রহন করেন। 5 বছর বয়সে তাকে কনভেন্ট পড়তে পাঠানো হয়। 7 বছর বয়সে
তাকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় তিনি সেখানে 14 বছর থাকেন। ছাত্রজীবন শেষ করে ভারতীয় সিভিল
সার্ভিস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। কিন্ত ইংরেজ শাসনের প্রতি বিরূপতার
জন্য তিনি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। তিনি Special Tripose অর্জন করেছিলেন। 1893 খ্রিস্টাব্দে তিনি
দেশে ফিরে আসেন এবং বরোদা কলেজে ইংরেজি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে এসে তিনি
ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির জ্ঞান লাভ করেন এবং বালগঙ্গাধর তিলকের বিপ্লবী মনোভাবের দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
1905 খ্রিস্টাব্দে তিনি
সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন তাঁর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের দুটি দিক
আছে। একদিকে তিনি গোপনে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, অপরদিকে তিনি
প্রেস ও বক্ততার মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রচার শুরু করেন।
তার বিপ্লবী মনোভাব প্রকাশ পায় বন্দেমাতরম পত্রিকার মাধ্যমে।1906 খ্রিস্টাব্দে
জাতীয় আন্দোলনের সময় প্রতিস্থিত Bangal National College এ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সহিংস আন্দোলনের জন্য 1960 খ্রিস্টাব্দে তিনি এক বছরের জন্য কারাবরণ
করেন। 1909 খ্রিস্টাব্দে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান জেল বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি
গভীরভাবে গীতা এবং উপনিষদের চর্চায় মগ্ন হন এবং তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। এই
সময় তিনি যোগ সাধন শুরু করেন এবং অতি উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্মিক চেতনা ঋষি অরবিন্দ
নামে পরিচিত হন। তার বাস্তব রুপ পায় পন্ডিচেরিতে এক আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি কেন্দ্র
গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।
শ্রী অরবিন্দের শিক্ষাদর্শন (Philosophy of Education)
শ্রীমদ ভাগবত গীতা কে তিনি জীবন দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং জীবনকে তিনি yoga হিসেবে দেখেছেন। শ্রী অরবিন্দের শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণা তার দার্শনিক চিন্তাধারা দ্বরা বিশেষভাবে প্রভাবিত। তার দর্শনচিন্তার দুটি মূল দিক হল মানুষ এবং সমাজ। তিনি মনে করতেন কোন একটি সমাজের
শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ভর করে সেই সমাজের প্রকৃতি এবং সেখানে যেসব মানুষ বসবাস করে
তাদের বুদ্ধি ও সংস্কৃতিক মনের উপর। তার মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো স্বর্গীয় এবং
ঐশ্বরিক জীবনের জন্য মানুষকে তৈরি করা। তিনি আত্মা এবং বিষয়কে যুক্ত করেছিলেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষা
হলো অন্তরআত্মাকে আলোকিত করার উৎস যা মানুষের শারীরিক, মানসিক, বৌদ্ধিক, এবং
আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটায়। তাই বলা যায় শ্রী অরবিন্দের শিক্ষাদর্শন বর্তমানে
চাহিদা সমন্বয়ী ধারণাকে বিশেষভাবে পরিপূর্ণ করে। দর্শনের যে চরম সত্য তাকে অবশ্যই
বর্তমানের চাহিদা মেটাতে হবে। এই সময়ের দাবী হল আশাবাদ সর্বাপেক্ষা গতিশীল দিক।
শিক্ষার লক্ষ্য(Aim of Education)
শ্রী অরবিন্দের শিক্ষাদর্শন প্রাচীন ভারতীয় বেদান্তের উপর পতিষ্ঠিত এক আধুনিক
পাশ্চাত্য জ্ঞানের দ্বারা সম্পৃক্ত।
অরবিন্দের শিক্ষার মূল লক্ষ গুলি হলো
- তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয়ী ধারণার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীর বিকাশ। শিক্ষার সমন্বয়ী ধারা গঠিত হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিদ্যালয়ের দ্বারা এবং এখানে প্রত্যেককে তার সঠিক স্থান দিতে হবে। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য শিক্ষাবিদ শিক্ষার সমন্বয়ী ধারণাকে মেনে নিয়েছেন। তবে শ্রী অরবিন্দ শিক্ষার সমন্বয়ী ধারণাকে অনেক বেশি ব্যাখ্যা করেছেন। শ্রী অরবিন্দের শিক্ষাচিন্তায় একদিকে যেমন বাক্তি সমাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে জাতীয় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। তিনি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি যোগ শিক্ষাকে পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে বর্ণনা করেছেন।
- ভাববাদ ও প্রয়োগবাদের সমন্বয় শ্রী অরবিন্দের শিক্ষার লক্ষ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষার লক্ষ্য হল ভাববাদের দ্বারা প্রভাবিত অর্থাৎ বন্ধন থেকে মুক্তি এবং আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য প্রয়োগবাদ দ্বারা প্রভাবিত অর্থাৎ শিক্ষাই হলো জীবন। শ্রী অরবিন্দের শিক্ষাচিন্তায় এই ভাববাদ ও প্রয়োগবাদের সমন্বয় ঘটেছে।
- শ্রী অরবিন্দ মানুষের প্রকৃতির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি মনে করতেন স্বর্গীয় অনুভব মানুষের মধ্যে সঞ্চালিত হয় তিনি শিশুর স্বর্গীয় উপাদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই সত্ত্বার বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে।
- তার মতে শিক্ষার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো মানুষ তৈরি করা। তার জাতীয় শিক্ষাব্যাবস্থার মূল লক্ষ্য হল মানুষের অভিব্যক্তি। এই উদ্দেশ্যে তিনি পন্ডিচেরিতে 1952 খ্রিস্টাব্দের 24 শে এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার শিক্ষা চিন্তার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র মানব জাতিকে একসূত্রে বাঁধা।
শ্রী অরবিন্দের মতে মূল্যবোধের শিক্ষা (Value Education According)
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের
মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটেছে। ক্রমশ পুরাতন মূল্যবোধ গুলি প্রতিস্থাপিত হচ্ছে নতুন
মূল্যবোধে দ্বারা। তারা মতে সর্বাপেক্ষা উচ্চ মূল্যবোধ হোলো ঐক্য।শারীরিক মানসিক এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ গুলি চর্চার প্রয়োজন।অন্যান্য মূল্যবোধ গুলি হল আধ্যাত্মিকতা, পরিবর্তনশীলতা
প্রভৃতি।এই সমস্তরই বিকাশ এবং পরিচর্যার প্রয়োজন। বিকাশের জন্য সর্বাপেক্ষা
উল্লেখযোগ্য মূল্যবোধ হল সাধুতা শ্রী অরবিন্দের মতে শিক্ষার সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো
আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের বিকাশ।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা (Mother Language Medium Education)
তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা কে প্রকৃত
শিক্ষা বলে মনে করতেন। তিনি মনে করতেন মাতৃভাষার শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে তারপর অন্য
ভাষা শিক্ষার প্রশ্ন ওঠে। আর এই বিষয়টি সেই সময়কার শিক্ষা জগতের সকল দার্শনিক
মেনে নিয়েছিলেন
শিক্ষণ পদ্ধতি ও শিক্ষকের ভূমিকা (Teaching Method and Role of Teaching)
শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
বর্তমান শ্রী অরবিন্দ তার পুস্তকে "এ সিস্টেম অফ ন্যাশনাল এডুকেশন" এই তিনটি মূলনীতি কথা বলেছেন
- তিনি বলেছেন প্রকৃতপক্ষে কোনো কিছুই শেখানো যায় না। তিনি বিবেকানন্দের মতো শিক্ষকের সহায়কের ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে যে ঈশ্বরের অংশ আছে তাকে উদ্দীপিত করাই তার কাজ।
- তিনি মন্তব্য করেছেন মন কে তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিকাশের সুযোগ দিতে হবে কোন কিছুই উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ভেতর থেকে উদ্দীপিত করতে হয় তাই শিক্ষা কেবল শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী হবে না তার ইচ্ছাকেও গুরুত্ব দিতে হবে
- শিখনের তৃতীয় নীতি হলো শিক্ষার্থীকে নিকট থেকে দূরে নিতে হবে। তাকে জানা থেকে অজানায় নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ অভিজ্ঞতাই হবে শিখনের ভিত্তি। পরিবেশের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা কে ঘিরেই শিক্ষার্থী নতুন জ্ঞান অর্জন করবে। এই নীতি শিখন এবং শিখনে শ্রবণ দর্শন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবহার সমর্থন করে।
ভারতীয় শিক্ষাবিদ অরবিন্দ ঘোষ শিক্ষা দর্শন
Reviewed by Unknown
on
October 08, 2018
Rating:

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অরবিন্দের চিন্তা ভাবনা কতটা প্রাসঙ্গিক?
ReplyDeleteThank your Sir. For this helping post. Really this post help me to understnad the topic properly.
ReplyDeleteVery Nice Post